Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জুম চাষে ম্যাথ মডেল প্রযুক্তি

জুম চাষে ম্যাথ মডেল প্রযুক্তি

কৃষিবিদ ড. মো: জহুরুল ইসলাম

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। কিন্তু কৃষিবিদদের দৃষ্টিতে বিস্তৃত এক-তৃতীয়াংশের বেশি কারণ পাহাড়ের চারপাশ ও উচ্চতায় কৃৃষিজ ফসল করা যায়। দেখা যায় যে, কোন এলাকার বা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি এবং সংস্কারবদ্ধ ধারণার ভিত্তিতে গড়ে উঠে সেখানকার চাষাবাদ এবং জীবনধারা। তেমনি পার্বত্য এলাকায় নিজস্ব সামাজিক সাংস্কৃতিক ধারায় উপজাতি ও বাঙালিরা বসবাস এবং চাষাবাদ করে আসছে। এই এলাকার কৃষি উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় পুরানো পদ্ধতিতে চাষাবাদ এক ফসলের এক সিজনের চাষ। একবার ‘জুম’ চাষ করে অন্য পাহাড়ে চলে যায়। কারণ সেখানে শুষ্ক মৌসুমে জ্বালিয়ে পুড়ায়ে তারা ফসল চাষ করে। এতে করে উপাদানের অবক্ষয় (ঘঁঃৎরবহঃ ইৎবধশফড়হি) হয়। মাটির পুষ্টি পরে ৩-৪ বছর সেখানে আর ফসল হয় না বা চাষাবাদ করে না। জুম চাষ অপরিকল্পিত ও অনুপযোগী বিশেষ করে প্রচলিত পদ্ধতিতে ‘জুম’ চাষ মৃত্তিকা ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে মাটির খাদ্যোপাদান কমিয়ে দেয়ার ফলে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে এবং প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু লাগসই প্রযুক্তির অভাবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাহাড়ি জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনের তাগিদেই এখনো অনেক জায়গায় জুম চাষ করছে।
জুম চাষ জুমিয়াদের একটি সংস্কারবদ্ধ ধারণা এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের উৎস। যেমনÑ চাকমা ও তংচঙ্গা উপজাতিদের পাঙ্গপূজার বেদিমূলে পূজার উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন পবিত্র স্থানের মাটি এবং এই মাটি অবশ্যই জুম জমি থেকে নিতে হবে। এভাবে দেখা যায় যে, জুম চাষ জুমিয়াদের একটি বহুদিনের ধ্যান-ধারণা চাকমা ও তংচঙ্গ্যা ছাড়াও অন্যান্য উপজাতীয় সংস্কৃতি জীবন ধারার সাথে জুম চাষ অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত। সুতরাং সরাসরি জুম চাষ বন্ধ হলে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে।
পাহাড়ি জমির মালিকানা চিন্তা না করে সামগ্রিকভাবে বলা যায়, পাহাড়ি এলাকায় বেশি জনসংখ্যার তুলনায় মাথাপিছু জমির পরিমাণ বেশি। তবে আবাদি জমির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। পাহাড়ি জমি সহজলভ্য হওয়ার কারণে জুমিয়ারা বেশি ফসল পাওয়ার জন্য সহজ পদ্ধতি এবং স্বল্প ব্যয়ে পাহাড়ি জঙ্গল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে জুম চাষ করে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী তুলনামূলক শিক্ষায় অনুগ্রসর এবং পুরাতন সামাজিক ধ্যান-ধারণায় বিশ^াসী। অন্য কোনো পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে তাদের অনীহা রয়েছে। কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় অন্য উপায়ে রোজগারের সুযোগ নেই। জুমিয়াদের জুম ফসল বার্ষিক খোরাক জোগায়। ফলে তাদের প্রধান আয়ের উৎস জুম চাষ। পাহাড়ে দীর্ঘদিন কর্মরত ও ব্যস্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কৃষিবিদ সমন্বয়ে সরেজমিনে বিভিন্ন জুম ক্ষেত্র পরিদর্শন ও জুমিয়াদের সাথে আলাপ আলোচনার একপর্যায়ে সাবেক স্থানীয় পরিষদ খাগড়াছড়ির সম্মানিত সদস্য জনাব মংপ্রু চৌধুরী বলেন, জুম চাষকে সরাসরি বন্ধ করা যাবে না, তবে জুমিয়াদের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক একটি বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হলে একপর্যায়ে তারা জুম চাষে আর আগ্রহী হবে না।
এমতাবস্থায়, পাহাড়ি জুমিয়াদের কথা বিবেচনা করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের রামগড় উপকেন্দ্র খাগড়াছড়িতে আমার নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়। টিমের সমন্বিত প্রচেষ্টায় নতুন ধারণার একটি লাগসই মডেল ‘ম্যাথ’ প্রযুক্তি আকারে তিন পার্বত্য অঞ্চলে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
ম্যাথ মডেল
‘ম্যাথ’ হল (গড়ফবৎহ অমৎরপঁষঃঁৎধষ ঞবপযহড়ষড়মু রহ ঃযব ঐরষষং.) পাহাড়ি অঞ্চলের উপযোগী চাষাবাদের একটি লাগসই মডেল। এই মডেল অনুসরণ করে ভূমির ক্ষয়রোধ ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে একই জমিতে বছরে কয়েকবার উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে বহু ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকদের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। এ ছাড়া এই মডেলের মাধ্যমে জুম চাষকে সরাসরি নিরুৎসাহিত না করে পর্যায়ক্রমে জুম চাষ বিলুপ্ত করা সম্ভব।
বাস্তবায়ন পদ্ধতি
ধাপ-১ : জমি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জুম ও পাহাড়ে যেসব ফসল হয় সেগুলো চাষাবাদের ব্যবস্থা করা।
ধাপ-২ : প্রথম বৃষ্টির পর পরই ‘ম্যাথ’ মডেলের অনুসরণে দ্রুতবর্ধনশীল ফসল যেমন- পেঁপে, কলা, কাঁকরোল, বরবটি, শসা অন্যান্য শাকসবজি, স্বল্পমেয়াদি ফল ফসল যেমন- পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, গাব ইত্যাদি। দীর্ঘমেয়াদি ফল যেমন- কাঁঠাল, লিচু, সফেদা, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা, জাম, নাসপাতি, আম, অ্যাভোক্যাডো ইত্যাদি এবং কাঠ-বনজ গাছ জুম ক্ষেতে একই সময়ে রোপণ করা।
ধাপ-৩ : ধান, মারফা, কাউন, ভুট্টা ও তিল সংগ্রহের পর পাহাড়ের ঢালভেদে জুম ক্ষেতের মধ্যে আড়াআড়িভাবে সারিতে (ঝঃৎরঢ় ঈঁষঃরাধঃরড়হ) আনারস, অড়হর ইত্যাদি ফসল চাষ করা।
ধাপ-৪ : সময়ভেদে জুম ফসল সংহের পরপর মৌসুমভিত্তিক কচু, ঢেঁড়স, বরবটি, টমেটো, বেগুন ও মরিচ ইত্যাদি ফসলের চাষাবাদ করা।
ধাপ-৫ : স্বল্পমেয়াদি ফসল যেমন -শাকসবজি চাষের পাশাপাশি জমি পরিষ্কার করে আচ্ছাদন ফসল (পড়াবৎ পৎড়ঢ়) আনারস ও অড়হর চাষ করা।
ধাপ-৬ : যেহেতু পার্বত্য এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়, হাটবাজার সে রকম নাই বলেই চলে তাই ম্যাথ মডেলের আওতায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করার লক্ষ্যে কৃষক সমিতি করে (ঈবহঃৎধষ চৎড়পঁৎবসবহঃ ধহফ উরংঃৎরনঁঃরড়হ চড়রহঃ ঈচউচ) এর মাধ্যমে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করা।
ধাপ-৭ : মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক তিন ভাগে বিভক্ত পাহাড়ের ১ম ও ২য় শ্রেণীর পাহাড়ের বেলায় ম্যাথ মডেলটি প্রযোজ্য। (ঝষড়ঢ় ৬০% উবমৎবব) পর্যন্ত ভালো ফসল করার উপযোগী।
ম্যাথ মডেলের উপকারিতা
ম্যাথ মডেলের মাধ্যমে চাষাবাদ করলে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে। একই জমিতে বহু ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে পাহাড়ি কৃষকদের স্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। শস্য পর্যায়ে (ঈৎড়ঢ় ৎড়ঃধঃরড়হ) অবলম্বনের মাধ্যমে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি করা ও মাটির ক্ষয়রোধ সম্ভব হবে। স্থায়ীভাবে বনায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করা ঈচউচ-এর মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যেও সমবায়ভিত্তিতে বাজারজাত করা যাবে।
১৮/২০ বছর পর মডেল থেকে কাঠ ফসল থেকে কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন হবে। কৃষি খাতে জিডিপিতে কয়েক এবং এ কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য সুপারিশ উপস্থাপন করা হলো। যেমন : ১) বিএআরআই, বিআরআরআই, ডিএই, এসআরডিআই এবং বিএফআইএল থেকে সম্মিলিতভাবে সমন্বয় করে পাহাড়ি কৃষকদেরকে গড়ঃরাধঃরড়হধষ ঞৎধরহরহম দিতে হবে; ২) পাহাড়ের উপযোগী ফসলের উন্নত বীজ সরবরাহ করতে হবে; ৩) যেহেতু পাহাড়ে সেচের পানির স্বল্পতা আছে, তাই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেচের ব্যবস্থা  করতে হবে; ৪) ছয় মাসের জন্য সুদ ছাড়া ফসল ঋণ দিতে হবে; ৫) স্থানীয়ভাবে ফসল উঠার পর বাজারজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে; ৬) অম্লীয় মাটিতে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর চুন ব্যবহার করতে হবে।
* পর্যায়ক্রমে ম্যাথ মডেলের বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষ বিলুপ্ত হবে।
লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অব.), বারি। মোবাইল : ০১৭১৫১১০৭৪৫, ই-মেইল :  jislamhrc@gmail.com

আপডেট চলমান


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon